What Are You Looking For?

Monday, September 8, 2014

ঘড়ির কাঁটা ডানদিকে ঘুরে কেন?


মানব সভ্যতায় ঘড়ি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। আজ আমরা যে আধুনিক ঘড়ি ব্যাবহার করছি, তার ইতিহাস কিন্তু অনেক পুরনো। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ঘড়ি, মানে সবচেয়ে পুরনো সূর্যঘড়ির মর্যাদা পায় মিশরীয়দের ওবেলিস্ক। ধারনা করা হয়, মিশরীয়রা এ ঘড়ি বানানো শিখেছিলো
খ্রিস্টের জন্মেরও সারে ৩ হাজার বছর আগে। এরকম আরেকটি ঘড়িকে বলা হয় ‘শ্যাডো ক্লক’। শ্যাডো ক্লক বানিয়েছিল ব্যবিলনীয়রা, খ্রিস্টের জন্মের প্রায় দেড় হাজার বছর আগে।

সূর্যঘড়িগুলোতে সময় দেখা হতো সূর্যের ছায়া দেখে। অর্থাৎ সময় নির্দেশক যে কাঁটা বা দন্ড, সেটা স্থির থাকতো আর সূর্যের ছায়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সরে যেতো। আর আমাদের ঘড়িতে আবার উল্টো; এ কাঁটাগুলোই ঘুরে ঘুরে সময় জানান দেয়। ছায়া দেখার কোন বালাই-ই নেই! এরকম ঘড়ি, মানে যে ঘড়িতে কাঁটা ঘুরে ঘুরে সম্য জানান দেয়, সেরকম ঘড়ি প্রথম বানানো হয় ১৩ শতকে। তবে তখন এ ঘড়িগুলো তেমন জনপ্রিয় হয়নি। হবে কী করে, তখনো তো মানুষের সময় দেখার তেমন প্রয়োজনই হয়নি! সূর্য দেখেই মানুষ বুঝতো-এখন সকাল না দুপুর, বিকাল না সন্ধ্যা। তখন এরচেয়ে বেশি সময় দেখার তেমন দরকার হতো না।


এর মোটামুটি ৪০০ বছর পরে, ১৮ শতকে যখন কল-কারখানা বসতে শুরু করলো, তখন মানুষের সময় দেখার দরকার হতে শুরু করলো। নির্দিষ্ট সময়ে কারখানায় যেতে হবে, নির্দিষ্ট সময় দুপুরের খাবার খেয়ে আবার কাজে লাগতে হবে, নির্দিষ্ট সময়ে ছুটি হবে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে তখন সবার ওই কাঁটাওয়ালা ঘড়ির দরকার পড়লো; যেন সবাই সময় মতো সব কাজ করতে পারে। এবার কিন্তু ঘড়ি খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠল।

এবার একটি হিসেব মেলানো যাক। যে অঞ্চলে পুরনো ঘড়িগুলো তৈরি হয়েছিল, মিশর আর ব্যবিলন- এগুলো মূলত একই অঞ্চলে অবস্থিত। আর এসব অঞ্চলে অবস্থানের কারণে সূর্যঘড়ির ছায়া দিনের সাথে ক্রমাগত পশ্চিম থেকে উত্তর হয়ে পূর্বদিকে সরে যেতো। সেখান থেকেই ঘড়ির কাঁটার দিকের ব্যাপারটা এসেছে। সেই অনুযায়ী-ই ঘড়ির কাঁটা পশ্চিম থেকে উত্তর ছুঁয়ে পূর্ব দিকে যায়।

ভাবছেন, পশ্চিম-উত্তর-পূর্বের সাথে আবার বাম-ডানের কী সম্পর্ক? আচ্ছা, তাহলে একটা মানচিত্র নিয়ে বসুন। খেয়াল করে দেখুন, মানচিত্রের উপরের দিকে দিক নির্দেশক একটি চিহ্ন আছে কিনা? এবার দেখুন তো, উপরের দিকের চিহ্নের পাশে কোন দিকের কথা লেখা? আর কিছু লেখা না থাকলেও ইংরেজি বর্ণের ‘এন’ লেখা আছে, তাই না? এই ‘N’ নর্থ বুঝাতে লেখা হয়। বাংলায় যাকে বলে উত্তর আর মানচিত্রের নিচের দিকটা হল দক্ষিণ। সুতরাং বাম দিকটা দাঁড়াচ্ছে পশ্চিম আর ডানদিকটা পূর্ব। এ কারণেই ঘড়ির কাঁটা বাম দিক থেকে দান দিকে সরে যাচ্ছে।

No comments:

Post a Comment